Translation option:
রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটের কারণে গম ও ভোজ্যতেলের পাশাপাশি সারের মতো গুরুত্বপূর্ণ পণ্য বৈশ্বিক বাণিজ্য ব্যাহত হচ্ছে, বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর ওপর এর প্রভাব ব্যাপকভাবে পড়ছে। বাংলাদেশ এই পণ্যগুলির আমদানির উপর অনেকটাই নির্ভরশীল, এবং বর্তমানে চলমান বাণিজ্য সংকোচনের কারণে দেশটি ক্রমবর্ধমান খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সম্ভাবনার মুখোমুখি।
এই সংঘাত এক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অগ্রগতিকে হুমকির মুখে ফেলেছে। ২০২১ সালে ১৬৫ মিলিয়ন জনসংখ্যার সাথে – যার মধ্যে ৩৮% কৃষি ও মৎস্য খাত এবং ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির দ্বারা নিযুক্ত রয়েছে, দেশের অপুষ্ট জনসংখ্যা ২০০০ সালে ১৬% থেকে ২০১৯ সালে ৯.৭% পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে। যদিও কভিড-১৯ মহামারী খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা বৃদ্ধি করেছে, তবে কিছু পদক্ষেপের মাধ্যমে দেশটি তুলনামূলকভাবে স্থিতিস্থাপক বলে প্রতীয়মান হয়েছে। আই এফ পি আর আই (IFPRI)-এর একটি সমীক্ষা অনুসারে, মাঝারি বা গুরুতর খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মুখোমুখি গ্রামীণ পরিবারের অনুপাত ২০২০ সালের প্রথম দিকে ১৫% থেকে বেড়ে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ৪৫% হয়েছে , তারপরে ২০২১ সালের শেষের দিকে প্রাক-মহামারী পর্যায়ে ফিরে এসেছে।
এখন যেহেতু ২০২১ সালের পুনরুদ্ধার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, ২০২২ সালের মার্চ মাসে সার বাজারে অস্থিরতার পাশাপাশি প্রধান খাদ্যপণ্যের দাম রেকর্ড বৃদ্ধি পেয়েছে বাংলাদেশ । এই নিবন্ধে আমরা রপ্তানি বিধিনিষেধের মুখোমুখি হওয়া বেশ কয়েকটি পণ্যে বাংলাদেশের বাণিজ্য নির্ভরতা, ক্রমবর্ধমান আমদানির আর্থিক প্রভাব এবং খাদ্য নিরাপত্তায় চাপ হ্রাসের জন্য সম্ভাব্য পদক্ষেপগুলি নিয়ে আলোচনা করেছি।
বাংলাদেশের খাদ্য ব্যবস্থার ঝুঁকি
ইউক্রেন যুদ্ধ বাংলাদেশকে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়ে প্রভাবিত করেছে।
প্রথমত, গমের বাজার। যদিও বাংলাদেশের ক্যালোরি গ্রহণের ক্ষেত্রে চালের উপর ঐতিহাসিকভাবে উচ্চ নির্ভরতা রয়েছে (মোট ক্যালোরির প্রায় ৬৮ শতাংশ), গম একটি ক্রমবর্ধমান গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উৎস – মোট ক্যালোরির প্রায় ৭%। ২০০০ সাল থেকে গমের ব্যবহার তিনগুণ বেড়েছে এবং বাংলাদেশ তার গমের চাহিদার ৮০ শতাংশেরও বেশি আমদানি করে। ২০০৫ সাল থেকে, রাশিয়া এবং ইউক্রেন থেকে এই পণ্যের বেশিরভাগ অংশ আমদানি করা হয় , যা বর্তমানে গমের মোট আমদানির অর্ধেকেরও বেশি (চিত্র এক) পৌঁছেছে। আমদানির সেই উৎসগুলো এখন ব্যাহত হওয়ায় বাংলাদেশকে বিকল্প উৎস খুঁজে বের করতে হবে। বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশ অন্যান্য সরবরাহকারীদের মধ্যে ভারত ও অস্ট্রেলিয়া থেকে গম কিনেছে। ভারত একটি ভাল ফসল আশা করছে এবং ইঙ্গিত দিয়েছে যে, দেশটি এই বছর বিশ্ব বাজারে ১০ মিলিয়ন মেট্রিক টন (এমটি) সরবরাহ করতে সক্ষম হতে পারে।
দ্বিতীয়ত, ভোজ্য তেলের বাজার। ইউক্রেন এবং রাশিয়া বিশ্বের সূর্যমুখী তেল রপ্তানির প্রায় ৭৫ শতাংশ সরবরাহ করে । বাংলাদেশ সূর্যমুখীর তেল আমদানি না করলেও যুদ্ধ পুরো ভোজ্যতেল সেক্টরে দাম বাড়িয়েছে। বাংলাদেশ তার ভোজ্য তেলের চাহিদার প্রায় সবই হয় কাঁচা বা প্রক্রিয়াজাত পণ্য (প্রাথমিকভাবে পাম তেল এবং সয়াবিন তেল) বা আমদানিকৃত তৈলবীজ (রেপসিড এবং সয়াবিন) আকারে আমদানি করে, যা অভ্যন্তরীণভাবে প্রক্রিয়াজাত করা হয়।
প্রধান ভোজ্য তেল রপ্তানিকারকদের দ্বারা আরোপিত বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞাও বাংলাদেশের ঝুঁকি বাড়িয়েছে। বাংলাদেশের পাম তেল আমদানির ৮০ শতাংশই সরবরাহ করে ইন্দোনেশিয়া। এই মার্চ মাসে, ইন্দোনেশিয়া পাম তেল এবং তার সহ পণ্য জন্য একটি প্রগতিশীল রপ্তানি শুল্ক বাস্তবায়ন করেছে যা বিশ্ব বাজারে মোট সরবরাহ সীমিত করতে পারে। এদিকে বাংলাদেশের সয়াবিন আমদানির প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই আর্জেন্টিনা থেকে সরবরাহকৃত । ১৩ ই মার্চ, আর্জেন্টিনা সয়াবিন তেল এবং খাবারের রপ্তানি সীমাবদ্ধ করে, তারপরে ৩১ শে মার্চ বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করে, রপ্তানির অনুমতি দেয় তবে সেই পণ্যগুলির উপর রপ্তানি কর ৩১% থেকে বাড়িয়ে ৩৩% করে। এই সমস্ত কারণগুলি ভোজ্য তেলের দাম রেকর্ড স্তরে পৌঁছেছে, এবং বাংলাদেশের মতো দেশগুলির জন্য আমদানি ব্যয় বাড়িয়েছে। আমরা যদি শস্য ও তৈলবীজ উভয় বাজারেই প্রভাবের কথা বিবেচনা করি, আমাদের রপ্তানি বিধিনিষেধ সংক্রান্ত ট্র্যাকিং টুল ইঙ্গিত দেয় যে, বাংলাদেশের মোট আমদানিকৃত ক্যালোরির ৩৮% এই ধরনের পদক্ষেপের দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে, এবং এটা ডলার মূল্যে মোট আমদানির এক চতুর্থাংশের সমান ।
তৃতীয়ত, সারের খরচ। বাংলাদেশের কৃষি, বিশেষ করে ধান উৎপাদনে, সার ব্যবহারের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করে। সারে গড় ব্যবহার হার ২৮৬ কেজি/হেক্টরেরও বেশি এবং বাংলাদেশ বছরে ১.২ মিলিয়ন টনেরও বেশি সার আমদানি করে, যার মধ্যে নাইট্রোজেনের চাহিদার ৩১%, ফসফেটের চাহিদার ৫৭% এবং পটাশ চাহিদার ৯৫%। রাশিয়া এবং বেলারুশ প্রধান বৈশ্বিক সার রপ্তানিকারক দেশ, এবং এই যুদ্ধ এবং রাশিয়াকে লক্ষ্য করে রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা এই বাজারগুলিকেও ব্যাহত করেছে। বাংলাদেশ তার পটাশ চাহিদার প্রায় ৭৫% রাশিয়া (৩৪%) এবং বেলারুশ (৪১%) থেকে আমদানি করে। বাংলাদেশকে সম্ভবত অন্যান্য দেশ থেকে এই পণ্যগুলি আমদানি করতে হবে এবং এতে করে বেশি দাম দিতে হবে। এর ফলে সারের ব্যবহার কম হবে, বিশেষ করে নাইট্রোজেন-ভিত্তিক সারের- যা চালের উৎপাদন হ্রাস করতে পারে, এবং চাল আমদানির চাহিদা বাড়াবে ।
উপরন্তু, বাংলাদেশ তার ভুট্টা ও সয়াবিন সরবরাহের ৪৪% আমদানি করে (FAOSTAT খাদ্য ব্যালেন্স শীটের উপর ভিত্তি করে গণনা), এবং এই পণ্যগুলিরও বিশ্বব্যাপী দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি বাংলাদেশের খাদ্য খাতকে প্রভাবিত করবে , যেমন হাঁস-মুরগি, গবাদি পশু এবং মাছের পণ্যগুলির উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি করে - যেগুলো মহামারীর কারণে ইতিমধ্যে দুর্বল হয়ে পড়া উপখাত । আগামী মাসগুলিতে প্রাণীজ পণ্যের সহজলভ্যতা হ্রাস এবং গম, ভোজ্য তেল এবং চালের মতো প্রধান পণ্যগুলিতে উচমূল্য এবং সরবরাহ বিঘ্নতা খাদ্য নিরাপত্তাকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।
খাদ্য সরবরাহ বজায় রাখতে হলে বাংলাদেশকে বেশি দামে পণ্য কিনতে হবে, এটি আর্থিক রিজার্ভের উপর চাপ সৃষ্টি করবে এবং মুদ্রা বাজারে প্রভাব ফেলবে । আমরা ইতিমধ্যে মুদ্রার অবমূল্যায়নের লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি । এর ফলে ভোক্তাদের জন্য অতিরিক্ত মূল্য বৃদ্ধি পাবে, কারণ বিশ্ব বাজারের দামগুলি দুর্বল মুদ্রা বিনিময় হার দ্বারা প্রসারিত হয় এবং জনসাধারণের অর্থের উপর আরও চাপ তৈরি করে, দেশের বৈদেশিক ঋণ (ইতিমধ্যে ২০২১ সালে মাথাপিছু ঋণ ৪৬০ ডলার পৌঁছেছে) এবং আভ্যন্তরীন কর্মসূচিগুলি বাস্তবায়নে বর্ধিত ব্যয়ের মধ্যে আটকা পড়ে।
সামষ্টিক অর্থনীতি এবং সরকারী নীতির উপর সরাসরি প্রভাব
অনেক দেশের মতো, বাংলাদেশেও ইতিমধ্যে দেশীয় খাদ্যের দাম বাড়ছে। যদিও ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে সরকারি হিসেবে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ৫.৫ শতাংশ, যা তুলনামূলকভাবে সহনীয় পরিস্থিতি চিত্রিত করে, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এর একটি প্রতিবেদনে অত্যাবশ্যকীয় জিনিসের জন্য উচ্চমূল্যের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে (যদিও চালের দাম এখন পর্যন্ত তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল রয়েছে)।
চলতি অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে (জুলাই থেকে শুরু হওয়া অর্থবছর) বাণিজ্য ঘাটতি ৮২% এরও বেশি বেড়ে ১৮.৭ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, এর কারণ হিসাবে দেখা যাচ্ছে আমদানি খরচ ২০২১ সালের একই সময়ের তুলনায় ৪৬% বৃদ্ধি পেয়েছে, এবং অপেক্ষাকৃত উচ্চ রপ্তানি প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও। আমদানির তালিকায় রয়েছে চাল, গম, সার ও সবজি যার খরচ ৫.৭৯ বিলিয়ন ডলার। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ, ইউ এস ডি এ (USDA) এর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ ২০২২-২৩ সালে ৭.৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন গম এবং ২.৩ মিলিয়ন মেট্রিক টন ভুট্টা আমদানি করতে হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
চিত্র দুই: https://datawrapper.dwcdn.net/zsCqZ/2/
বাংলাদেশ কীভাবে দরিদ্র ও কৃষকদের উপর ক্রমবর্ধমান মূল্য এবং সরবরাহ সমস্যা মোকাবেলা করতে পারে? সরকার ওপেন মার্কেট সেল (ওএমএস), খাদ্য বান্ধব কর্মসূচি (এফএফপি) এবং ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং (ভিজিএফ) সহ ব্যাপক পাবলিক ফুড ডিস্ট্রিবিউশন প্রোগ্রাম (পিএফডিএস) পরিচালনা করে। শুধুমাত্র এফএফপি প্রোগ্রামই ৫০ লক্ষেরও বেশি দরিদ্র পরিবারকে খাদ্যশস্য সরবরাহ করে, যার বার্ষিক ব্যয় ৩৮০ মিলিয়ন ডলার। মহামারির প্রথম বছরে, জনসাধারণের মধ্যে খাদ্য বিতরণ ২.৬ মিলিয়ন মেট্রিক টন (২০১৮-১৯) এর প্রাক-মহামারী স্তর থেকে ২.৮ মিলিয়ন মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। চলতি অর্থবছরে দেশটি ইতোমধ্যে ৩৩ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্যের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ১৫ লাখ টন বিতরণ করেছে।
চিত্র তিন: https://datawrapper.dwcdn.net/D64sx/1/
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে কভিড-১৯-এর কারণে আয় হ্রাস এবং উচ্চ বেকারত্ব অনেক পরিবারকে দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিয়েছে, যার ফলে সরকার খাদ্য বিতরণ কর্মসূচি, বিশেষ করে ওএমএসের মাধ্যমে প্রসারিত করেছে। গত মার্চে আরও এক কোটি পরিবারকে সহায়ক মূল্যে সয়াবিন তেল, চিনি, ছোলা ও মসুর ডাল সরবরাহের যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা দেশের ক্রমবর্ধমান খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা সমস্যার ইঙ্গিত দেয় ।
এদিকে, সারের জন্য সরকারী ভর্তুকি ২০২১-২২ সালে রেকর্ড সর্বোচ্চ ৩.২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে বলে মনে করা হচ্ছে, যা বাজেটে নির্ধারিত ১ বিলিয়ন ডলার এর তিনগুণ। কৃষকরা ভর্তুকি পান যা বিভিন্ন ধরণের সারের বাজার মূল্যের ৭০% থেকে ৮৫%। মোট ৫.৮ মিলিয়ন মেট্রিক টন সারের চাহিদা এবং বাজারে সরবরাহ বিঘ্ন ঘটায় কৃষকরা এখন সময়মতো সার পাওয়ার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তার মুখোমুখি। সারের ঘাটতি এই বসন্তে আউস ধান, জুলাই মাসে আমন এবং শুষ্ক মৌসুমে বোরো ধান রোপণে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে।
নীতি সুপারিশসমূহ
দরিদ্রদের জন্য খাদ্য নিরাপত্তাই সরকারের নীতিনির্ধারণী লক্ষ্য হওয়া উচিত । যদিও চালের জন্য দেশের উৎপাদন পূর্বাভাস (২০২২-২৩ সালে ৩৬.৩ মিলিয়ন মেট্রিক টন, ইউএসডিএ তথ্য অনুসারে) কিছুটা অনুকূল অবস্থার ইঙ্গিত দেয়, তা সত্ত্বেও বিদেশ থেকে ০.৭ মিলিয়ন টন চাল সংগ্রহ করতে হবে। আমরা দেখতে পাই আন্তর্জাতিক গম এবং ভুট্টার সরবরাহ অনিশ্চিত, যেমনটি সারের মতো। এখন এটি দেখার বিষয়, বাংলাদেশ কীভাবে এই প্রধান পণ্যগুলোর বর্তমান উচ্চমূল্য এবং সরবরাহ ঘাটতি মোকাবিলা করতে পারে এবং খাদ্য নিরাপত্তা বজায় রাখতে পারে।
মুদ্রাস্ফীতির চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য, সরকারের উচিত দেশীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় বাজারেমূল্যের প্রবণতা পর্যবেক্ষণ করা এবং পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ বজায় রাখার জন্য সময়োপযোগী ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
আই এফ পি আর আই (IFPRI)’ র গবেষণায় দেখা গেছে যে মহামারীর প্রাথমিক পর্যায়ে এফএফপি কর্মসূচির আওতায় খাদ্য বিতরণে দুর্বলতা ছিল, যার মধ্যে সব প্রকৃত উপকারভুগিদের সঠিকভাবে নির্বাচন করতে না পারা এবং অন্যান্য বিষয়গুলির মধ্যে বিতরণ করা খাদ্যের পরিমাণের কম বরাদ্দ অন্যতম। যেহেতু সরকার এখন খাদ্য গ্রহণকারী মানুষের সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাই এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে সুবিধাভোগীদের নির্বাচন সঠিকভাবে সম্পন্ন করা হয়, বিশেষ করে প্রক্রিয়াটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে করার মাধ্যমে। নিয়মিত পর্যবেক্ষণ এবং এই জাতীয় কর্মসূচির কার্যকর মূল্যায়ন সরবরাহে ঘাটতি এবং অদক্ষতা সম্পর্কে সরকারকে সতর্ক করতে সহায়তা করতে পারে। সুষ্ঠ বিতরণ নিশ্চিতকরণে সার বিতরণ কর্মসূচিতেও অনুরূপ পদ্ধতিগুলি অনুসরণ করা যেতে পারে।
বাজার স্থিতিশীল করতে সহায়তা করার জন্য কিছু স্বল্পমেয়াদী উদ্যোগ বিবেচনা করা যেতে পারে। সরকারের উচিত ওএমএস এবং অন্যান্য কর্মসূচির মাধ্যমে ভোক্তাদের সহায়তা অব্যাহত রাখা। এ ক্ষেত্রে আমরা এটাকে উৎসাহব্যঞ্জক বলে মনে করি যে, খাদ্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সরকার ইতোমধ্যেই আমদানি শুল্ক ও মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) কমিয়েছে। কাঠামোগত দুর্বলতাগুলি মোকাবেলা করার জন্য দীর্ঘমেয়াদী সংস্কারের প্রয়োজন হবে - বিশেষ করে, সারের উপর ভর্তুকির সংস্কার, কারণ এই জাতীয় নীতিগুলি পরিবেশগত এবং আর্থিক দৃষ্টিকোণ থেকে টেকসই নয়।
উপসংহার
যেহেতু চলমান ইউক্রেন-রাশিয়া সংকট বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলেছে, বাংলাদেশও একটি দুর্দশার মুখোমুখি। সরবরাহ বজায় রাখার জন্য আমদানিপণ্যের জন্য ক্রমবর্ধমান মূল্য প্রদান সার্বিক মুদ্রার মজুদকে আরও সংকুচিত করবে এবং সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি প্রসারিত করার জন্য সরকারের হাতে খুব কম বিকল্প থাকবে ।
এদিকে, খাদ্যের বাইরে বিশ্ব বাজারের সমস্যাও দেশের অর্থনীতিকে হুমকির মুখে ফেলেছে। টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস খাত ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যার ফলে অনেক দরিদ্র পরিবারের জন্য আয় ও চাকরি ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারে। প্রকৃতপক্ষে, সিন্থেটিক এবং প্রাকৃতিক তন্তু (গত দুই বছরে তুলার দামের +৭২% বৃদ্ধি) উভয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে, যখন মহামারীর সময় বিশ্বব্যাপী চাহিদা হ্রাস পেয়েছিল, এবং আর এখন যুদ্ধের কারণে বাংলাদেশের রপ্তানির জন্য রাশিয়ার বাজারে পণ্য সরবরাহ এবং আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে অর্থ প্রাপ্তি অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হয়েছে।
এই উদ্বেগগুলি ইতিমধ্যে কোভিড-১৯ মহামারী থেকে দীর্ঘমেয়াদী পুনরুদ্ধারকে হ্রাস করছে এবং কোনও সন্দেহ নেই যে ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জনে অগ্রগতি বিলম্বিত হবে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আইএমএফের মতো আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সহায়তা, বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা চাহিদাগুলি কার্যকরভাবে পরিচালনা করার জন্য ভোক্তা ভর্তুকি অব্যাহত রাখা, বাজার বুদ্ধিমত্তা এবং খাদ্য ও সার বিতরণ কর্মসূচির কার্যকারিতা দ্রুত মূল্যায়নের জন্য সরকারের একটি সমন্বিত পরিকল্পনা প্রয়োজন।
Abdullah Mamun is a Senior Research Analyst with IFPRI's Markets, Trade, and Institutions Division (MTID); Joseph Glauber and David Laborde are MTID Senior Research Fellows. Opinions expressed are those of the authors.